দৃষ্টিআকর্ষণ
রূহানী ওযীফা তখনই উপকারে আসে, যখন তা শর্ত অনুযায়ী আদায় করা হয় । যদি শর্তসমূহ পুরা করা না হয়, তাহলে শুধু পড়ার দ্বারা কোনই উপকার আসবে না। সাধারণভাবে মানুষ ওযীফা আদায়ের সময় তার শর্তসমূহের প্রতি লক্ষ করে না। পরে নিজেদের আক্বীদা খারাপ করে বসে যে, আমাদের দু’আ তো কবুলই হয় না। এই সুযোগে শয়তান তাদেরকে ভ্রান্ত পথে পরিচালিত করে।
ওযীফা কার্যকরী হওয়ার শর্তসমূহ
এক. ইয়াকীন ও বিশ্বাসের সাথে আমল করতে হবে; সন্দেহ আমলকে বিনষ্ট করে দেয়।
দুই. অত্যন্ত তাওয়াজ্জুহর সাথে আমল করতে হয়; তাওয়াজ্জুহ হীন আমল হাওয়ায় মিসে যায়।
তিন. হালাল রিযিক ভক্ষণ করা, হারাম খানা আমলের ক্রিয়াকে নষ্ট করে দেয়।
চার. সকল আমল আল্লাহ তা’আলার সন্তুষ্টির জন্য করবে। যদি মালিক রাজি হয়ে যান, তাহলেই কাজ হয়ে যাবে।
পাঁচ. ফরজের ইহতিমাম করবে। যে ব্যক্তি নামায ও অন্যান্য ফরজ যথাযথ আদায় করে না, তার সকল আমল ক্রিয়াহীন হয়ে যায়।
ছয়. হারাম কাজ থেকে বেঁচে থাকবে। ঐ সকল কাজ, যা শরীয়তে ইসলাম হারাম করে দিয়েছে, তা করার দ্বারা রূহানিয়াত নষ্ট হয়ে যায়। তখন কোন আমলের ক্রিয়া থাকে না।
সাত. শব্দকে সহীহ শুদ্ধভাবে উচ্চারণ করা। অনেক সময় শব্দ ভুল উচ্চারণ করার দ্বারা অর্থ পরিবর্তন হয়ে যায়।
আট. পবিত্রতার প্রতি লক্ষ করবে। নিজে পাক-পবিত্র থাকবে। কাপড় ও স্থানকেও পাক-পবিত্র রাখবে ।
নয়. অনুনয় ও বিনয়ের সাথে সাথে আমলকে আদায় করবে ।
দশ. শুধু ঐ আমলসমূহ করবে, যার শরীয়ত সমর্থন করে । বর্তমান অবস্থা এতই কঠিন ও সংকীর্ণতার মাঝে অতিবাহিত করছে যে, কোন একটি সমস্যা সমাধানের জন্য সাধারণ মানুষ তো ব্যাপকভাবে আর শিক্ষিত, উচ্চশিক্ষিত লোকও পর্যায়ক্রমে ভ্রান্ত আমলের পাশাপাশি পথভ্রষ্ট জাদুকর ও তদবীরকারকদের নিকট গিয়ে নিজেদের মূলবান সময়, কষ্টার্জিত সম্পদ ব্যয় করছে । শুধু তা-ই নয়; বরং অজ্ঞতার ও ধোঁকার শিকার হয়ে নিজেদের মহামূল্যবান বস্তু ঈমানকে পর্যন্ত বিলিয়ে দিচ্ছে ।
জাতির এহেন পরিস্থিতিতে, সময়ের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করে, শরীয়তে ইসলামীর মাধ্যমে মানবতার সমস্যার সমাধানগুলো উপস্থাপন করা হচ্ছে । বর্তমানে আপনাদের সামনে উপস্থিত করা কিতাবটি আশা করি সেই চাহিদা পরিপূর্ণরূপে সমাধান করবে ।
সাথে সাথে অত্যন্ত আনন্দের বিষয় হল, এ কিতাবটি যার কলম থেকে প্রকাশ হয়েছে, তিনি শুধু একজন সাহেবে কলমই নন; বরং তিনি একজন সুপ্রসিদ্ধ সহেবে হাল তথা অবস্থা ও বস্তবতার প্রত্যক্ষ স্বাক্ষী ।
আল্লাহ তা’আলা হযরত শাইখ মাওলানা মুহাম্মদ মাসউদ আযহার হাফিজাহুল্লাহকে কর্ম ও বক্তব্যের যে অলংঙ্কার দ্বারা সুসজ্জিত করেছেন এবং গোটা বিশ্বব্যাপী দাওয়াতের জিহাদের যে কাজ আল্লাহ তা’আলা তাঁর দ্বারা নিয়েছেন, তার প্রশংসা করার কোন প্রকার অবকাশ রাখে না।
সময়ে শ্রেষ্ঠ বুযুর্গ যিনি নিজেকে শুধু শরীয়তের ইমাম হিসাবেই স্থাপন করেন না; বরং তরীকতের লাইনেও সুউচ্চস্থানে অবস্থান গ্রহণ করেছেন হযরত শাইখুল হাদীস মুফতী ওয়ালী হাসান টুনকি (রহ.), শহীদে ইসলাম হযরত মাওলানা মুহাম্মদ ইউসুফ লুধিয়ানুভী (রহ.) ও হযরত মুফতী রশীদ আহমদ লুধিয়ানুভী (রহ.)সহ অন্যান্য অসংখ্য আহলে ইলম ও তাকওয়া হযরত মাসউদ আযহারকে নিজেদের আস্থাভাজন হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছেন এবং অনেকে খেলাফতও দিয়েছেন, যা তাঁর সৌভাগ্য ও গ্রহণযোগ্যতার জন্য যথেষ্ট ।
শক্তি, সুস্থতা ও প্রতিক্রিয়া
কুরআনুল কারীমের সামনে কোন প্রকার বাতেল দন্ডায়মান হতে পারে না, জলিমের শক্তি, প্রতাপ, কৌশল ও সকল প্রকার দুশমনি কুরআনুল কারীমের সামনে পানির মাঝে সৃষ্ট ফেনার চাইতেও দুর্বল। কুরআনুল কারীমের আলো বদকর্মশীলদের চক্ষুকে অন্ধ করে দেয় । আমি কুরআনুল কারীমের সামনে হাজারো বিশাল প্রতাপশালী দুশমনকে ভীত ও ধ্বংস হতে দেখেছি । আফ্রিকার কালা জাদুকে কুআনের একটি আয়াতের সামনে চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে পলায়ন করতে দেখেছি ।
হিন্দুস্তানের বড় জাদুকর, সাধু ও বিখ্যাত তান্ত্রিক পবিত্র এই কালামুল্লাহর সামনে পযুদস্ত হয়ে পড়েছে এবং বলতে বাধ্য হয়েছে, এটা তো অনেক উঁচা কালাম । এর মোকাবেলা করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। কিন্তু আফসোস, আজ কিছু মুসলমান কুরআনুল কারীমকে পরিত্যাগ করে সে সকল তান্ত্রিকতা ও জাদুবিদ্যর আশ্রয় গ্রহণ করছে। কুরআন এখনও নিজের পরিপূর্ণ শক্তি, সক্ষমতা, শান ও পরিপূর্ণ প্রতিক্রিয়াশীল অবস্থায় বিদ্যমান রয়েছে। কিন্তু মুসলমান অজ্ঞতা ও নির্বুদ্ধিতার কারণে চমকপ্রদ বিজ্ঞাপনের প্রভাবে নিজের ঈমান ও আকীদাকে যবেহ করে দিচ্ছে। সত্যিকারের কর্মসম্পাদনকারী কখনো বিজ্ঞাপনবাজির পিছনে পড়ে না ।
হে মুসলমান! আস; কুরআনুল কারীমের দিকে ফিরে আস । একে নিজে শুদ্ধভাবে পাঠ করা শিখ, নিজে তাকে তিলাওয়াত করে বুঝ এবং এর উপর আমল কর । ব্যস, তোমরা এরই মাঝে ডুবে যাও; সে তোমাদেরকে সকল পথে সন্ধান দিয়ে দিবে । এ-ই তোমাদের আহকামুল হাকিমীন পর্যন্ত পৌঁছে দিবেন, যিনি সকল সমস্যার সমাধানকারী। নিজের মাসুম বাচ্চাদেরকে কখনো এই মূল্যবান নেয়ামত থেকে বঞ্চিত করো না । এটা সত্য যে, শক্তি ও দৃঢ়তাপূর্ণ কিতাব আমাদের সকলের জন্য রহমতস্বরূপ এবং এটি কিতাবুস শিফাও।
মহান আল্লাহ নিজেই ঘোষণা দিচ্ছেন-
وَنُنَزِّلُ مِنَ الْقُرْآنِ مَا هُوَ شِفَاءٌ وَرَحْمَةٌ لِلْمُؤْمِنِينَ وَلَا يَزِيدُ الظَّلِمِينَ إِلَّا خَسَارًان
অর্থ. আমি কুরআনে এমন বিষয় নাযিল করি, যা রোগের সুচিকিৎসা এবং মুমিনদের জন্য রহমত । গোনাহগারদের তো এতে শুধু ক্ষতিই বৃদ্ধি পায় ।
মাওলানা মাসউদ আযহার
১৮ যিলক্বদাহ-১৪২৪ হিজরী