সমস্ত প্রশংসা সেই মহান সত্তার জন্য, যিনি তাঁর নবী-রসূলগণকে সুস্পষ্ট দলীল-প্রমাণাদি সহকারে মানব জাতির নিকট প্রেরণ করেছেন। যিনি মানুষের জন্য সরল সোজা পথে চলার উদ্দেশ্যে এবং ন্যায়-নীতির অনুসারী হবার লক্ষ্যে নবী-রসূলগণের সাথে কিতাব এবং মীযান তথা ন্যায়ের মানদন্ড পাঠিয়েছেন। (সকল প্রশংসা তাঁরই প্রাপ্য) যিনি লোহা ও লৌহজাত বস্তু প্রেরণ করেছেন, যার মধ্যে একদিকে রয়েছে কঠিন শক্তি ও ভীতি, অপরদিকে রয়েছে মানব কল্যাণের অসংখ্য উপকরণ।
আল্লাহ্ তা’আলাই এ ব্যাপারে সব চাইতে বেশী অবগত যে, কার সাহায্য করা এবং কাকে পয়গম্বর বানানো উচিত। তিনিই একক শক্তিমান, প্রবল পরাক্রমশালী সত্তা, যিনি হযরত মুহাম্মাদ মুস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মাধ্যমে নবুয়্যত ধারার পরিসমাপ্তি ঘটিয়েছেন এবং তাঁকে শেষ নবী বানিয়েছেন।
*****(আরবী)
“আল্লাহ্ তা’আলা রাসূলুল্লাহ (সা)-কে পথ-নির্দেশক বিধি-বিধানসমূহ এবং সত্য জীবন ব্যবস্থা দিয়ে এজন্যে প্রেরণ করেছেন, যেন তিনি সকল মনগড়া জীবন ব্যবস্থা ও ধর্ম মতাদর্শের উপর এর প্রাধান্য প্রতিষ্ঠিত করেন”। (সূরা ফাতাহঃ ২৮)
মহানবীর মদদকল্পে তিনি পাঠিয়েছেন “ সাহায্যকারী বলিষ্ঠ দলীল,” জ্ঞান-প্রজ্ঞা, কলম, হিদায়াত,যুক্তি-প্রমাণ,ক্ষমতা, শক্তি-সামর্থ্য, প্রভাব প্রতিপত্তিও (শক্তির প্রতীক) তরবারী। বলাবাহুল্য, মান-মর্যাদা ও অন্যায়-অসত্যের উপর বিজয়ের জন্যে এ সকল গুণ অত্যাবশ্যক। আমি দৃপ্তকণ্ঠে ঘোষণা করছি যে, আল্লাহ্ ব্যতীত মা’বূদ হবার যোগ্য অপর কোন সত্তা নেই, তাঁর কোন শরীক নেই। তাঁর কোন সহকর্মী ও সমকক্ষ নেই। এ সাথে আরও ঘোষনা করছি যে, মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা) আল্লাহ্র একজন বান্দা ও রাসূল। তাঁর প্রতি আল্লাহ্র অসংখ্য রহমত বর্ষিত হোক। রহমত বর্ষিত হোক তাঁর বংশধর ও সকল সাহাবীর উপর। তাঁদের উপর নেমে আসুক শান্তি, করুণার অফুরন্ত ধারা। আমার এই ঘোষণা ও সাক্ষ্যদান হোক সেই মর্যাদার অধিকারী, যদ্দারা ঘোষণাকারী সকল সময়ের জন্যে খোদায়ী নিরাপত্তা ও তত্ত্বাবধানে চলে যায়।
গ্রন্থটি লেখার মূল প্রেরণা
মূলতঃ এটি একটি সংক্ষিপ্ত গ্রন্থ হলেও তাতে আল্লাহ্ প্রদত্ত রাজনৈতিক বিধি-ব্যবস্থা এবং মহানবীর প্রতিনিধিত্বের বিষয়সমূহ পরিপূর্ণরুপে বিবৃত হয়েছে। এ থেকে সকল শাসক, শাসিত, রাজা-প্রজা কারও পক্ষেই কোন অবস্থায় আপন দায়িত্বের প্রতি ঔদাসীন্য প্রদর্শন বা তা থেকে অব্যাহতি লাভের কোন অবকাশ নেই। এ গ্রন্থ রচনার মূল লক্ষ্য হচ্ছে রাষ্ট্রী সকল কার্যনির্বাহী কর্মকর্তা এবং দেশের নীতি নির্ধারক, পরিচালকবৃন্দকে এমন উপদেশ বা পথ নির্দেরশনা প্রদান করা, যা আল্লাহ্ তা’আলা ঐসব শাসক-পরিচালকের উপর অপরিহার্য করে দিয়েছেন। যেমন রাসূলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেছেনঃ
*****(আরবী)
“তিনটি কাজে আল্লাহ্ তোমাদের প্রতি সন্তুষ্ট থাকেন। (১) তোমরা একমাত্র আল্লাহ্রই দাসত্ব করবে, (২)তাঁর সাথে অপর কাউকে শরীক করবে না, (৩) সকলে ঐক্যবদ্ধভাবে আল্লাহ্র রজ্জুকে দৃঢ় হস্তে ধারণ করবে এবং পরস্পর বিচ্ছিন্ন হবে না আর আল্লাহ্ তোমাদেরকে যাদের উপর কর্তৃত্ব প্রদান করেছেন, তাদেরকে সদোপদেশ প্রদান করবে”।
“আস্সিয়াসাতুশ্ শারইয়্যা” বা শরীয়তী রাষ্ট্রব্যবস্থা গ্রন্থটির মূল ভিত্তি হচ্ছে আল্লাহ্র কিতাবের যে সকল আয়াত, যেগুলোতে বলা হয়েছে যে-
******(আরবী)
“ (মুসলমানগণ!) আল্লাহ্ তোমাদের নির্দেশ করেছেন যে, তোমরা আমানতসমূহ অর্থাৎ মানুষের অধিকারসমূহ ঐগুলোর মালিক তথা হকদারদের কাছে পৌঁছে দাও। তোমরা যখন জনগণের পারস্পরিক বিরোধ নিষ্পত্তির উদ্যোগ নাও, তখন ন্যায়-নীতির মধ্য দিয়ে তা ফয়সালা করো। আল্লাহ্ তোমাদের যে উপদেশ প্রদান করেন, সেটা তোমাদের জন্যে কতই না উত্তম। এতে কোন সন্দেহ নেই যে, আল্লাহ্ সব কিছুই অধিক শুনেন, অধিক দেখেন। (হে মুসলমানগণ!) তোমরা আল্লাহ্র নির্দেশ মেনে চলো এবং তাঁর রাসূলের নির্দেশ মেনে চলো আর মেনে চলো তোমাদের (রাষ্ট্রীয়) দায়িত্বশীল নেতাদের নির্দেশও। অতঃপর যদি তোমাদের মধ্যে কোন প্রকার মতবিরোধ দেখা যায়, আল্লাহ্ তা’আলা এবং আখিরাতের প্রতি বিশ্বাস স্থাপনের শর্ত হচ্ছে, বিরোধীয় বিষয়টির ফয়সালা আল্লাহ্ এবং তাঁর রাসূলের হাওলা করো। এটা যেমন তোমাদের জন্য উত্তম, তেমনি পরিণামের জন্য অতি শ্রেয়”। (সূরা নিসাঃ ৫৮-৫৯)
শরীয়ত বিশেষজ্ঞ আলিমদের অভিমত হলো, প্রথমোক্ত আয়াতটি ****(আরবী) রাষ্ট্রীয় নীতি নির্ধারক কর্মকর্তা এবং প্রশাসনিক কর্তৃত্বের সাথে সংশ্লিষ্টদের ব্যাপারে নাযিল হয়েছে। তারা যেন জনগণের অধিকারসমূহ তাদের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেন এবং মামলা-মোকদ্দমা ও জনগণের অন্যান্য অভিযোগের ক্ষেত্রে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করেন।
দ্বিতীয় আয়াতটির ****(আরবী) মধ্যদিয়ে প্রজা সাধারণ ও বিভিন্ন বাহিনীর লোকদের বলা হয়েছে, তারা যেন নিজ নিজ নেতা ও কর্মকর্তাদের কথা মেনে চলেন। এসব কর্মকর্তাই সরকারী সম্পদ বণ্টন এবং যুদ্ধের নির্দেশসমূহ জারি করেন, যুদ্ধ বিগ্রহ ইত্যাদিতে কাজ করেন। তবে যে স্তরের নেতাই হোন তিনি আল্লাহ্র অবাধ্য হওয়ার নির্দেশ দিলে তা মানা যাবে না এবং আল্লাহ্র নির্দেশের পরিপন্থী কোন আইন বা হুকুম করলে কখনও তা পালন করবে না। এ ব্যাপারে মহানবী (সা) ইরশাদ করেছেন যে,
****(আরবী)
“ স্রষ্টার অবাধ্যজনিত কাজের হুকুম করা হলে তা মানা জায়েয নেই”।
অতএব,যখন কোন ব্যাপারে তোমাদের পরস্পরের মধ্যে বিরোধ দেখা দেয়, তখন তোমরা মনোনিবেশ করো কুরআন ও সুন্নাহ কি বলে সে দিকে অতঃপর সে অনুযায়ীই ফয়সালা করো। বিবাদমান ব্যক্তিরা যদি এভাবে বিরোধ নিস্পত্তি না করে, তখন রাষ্ট্রীয় কর্মকর্তাদের উপর ফরয হলো উপরোল্লেখিত আয়াতের নির্দেশ অনুসারে কাজ করা এবং আল্লাহ্র নির্দেশকেই কার্যকর করা। আল্লাহ্র নির্দেশ হলোঃ
****(আরবী)
“ কল্যাণ এবং সংযমী হবার কাজে তোমরা একে অপরের সহযোগিতা করো এবং পাপ ও সীমালঙ্ঘনের কাজে অপরকে সহযোগীতা করো না”। (সূরা মায়িদাঃ ২)
এ আয়াত অনুযায়ী কাজ করা হলে আল্লাহ্ এবং তাঁর রাসূলের আনুগত্য করা হবে এবং তাদের হকও যথারীতি আদায় হবে।
উল্লেখিত আয়াতের মধ্যে আমানত আদায় করা ও হকদারের হকসমূহ তার কাছে যথাযথ পৌঁছে দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বলা বাহুল্য, আমানত আদায় তথা জনগণের অধিকার প্রদান করা ও তাতে ন্যায়-নীতির অনুসরণ- এ দু’টি বিষয়ই হচ্ছে ন্যায়-নীতির শাসন, সৎ নেতৃত্ব এবং কল্যাণ রাষ্ট্রের মূল লক্ষ্য। এর মধ্যদিয়েই আমানত আদায় হবে।
Reviews
There are no reviews yet.